অদ্বৈত

নচিকেতা

লেখক : নচিকেতা

সন্ধেবেলা আড্ডা মারছিলাম রকে বসে, আমরা গোটা চারেক বন্ধু। শীতকালের সন্ধে, দূরের ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো কেমন কুয়াশার ঘোমটা ঢাকা বিধবা পিসিমার মতো। বাইরে লোক খুব একটা নেই, আমরা মূল রাস্তা থেকে একটু দূরে একটি মাঠের মধ্যে নিজেদের বানানো কাঠের রকে বসে, অন্ধকারে। একটা সময় কথাবার্তার মোড় ঘুরে এল আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিকে। বিষয়— নেলসন ম্যাণ্ডেলা। আমরা প্রাথমিক পর্বে নেলসনের গুণকীর্তন করেই চলেছিলাম। তাঁর ২৩ বছর জেলের অন্ধকারের মধ্যে থাকা, বর্ণবিদ্বেষী সরকারের বিরুদ্ধে অধিকারের লড়াই, ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন সময় ছায়ার মতো এক জন প্রবেশ করল আমাদের আড্ডায়। আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি তার উপস্থিতি। আমাদের মধ্যে অনিন্দ্যই প্রথম সমালোচনার সুর ধরল, ‘‘কিন্তু যাই বল, নেলসন জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর নিজের স্ত্রীকে ডিভোর্স করে ভাল করেননি। অথচ ভাব, এই স্ত্রীই নেলসনের অবর্তমানে অর্থাৎ জেলে থাকার সময় নেলসনের আন্দোলনকে এত দূর নিয়ে এসেছিলেন, এটা খুব অমানবিক কাজ হল না?’’

চন্দন বলে উঠল, ‘‘এটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়, উনি কার সঙ্গে থাকবেন বা থাকবেন না, এটা তো উনি নিজেই ঠিক করবেন। এ সব বলে ওঁর রাজনৈতিক কার্যকলাপকে কলঙ্কিত করার কোনও মানেই হয় না। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্কই নেই।’’ হঠাৎ ছায়ার মধ্যে থাকা ছায়ামূর্তিটা বলে উঠল, ‘‘আচ্ছা! তাই নাকি?’’ আমরা চমকে তাকিয়ে দেখি ছায়ার মধ্যে, কখন মানুষটা এসে ঘাসের ওপর বসে পড়েছে বুঝতে পারিনি। ছায়ামূর্তিকে সনাক্ত করা গেল— ঘটাদা! ঘটাদা আমাদের পাড়ারই এক জন, আমাদের থেকে বছর দশেকের বড়। ঘটাদা সম্পর্কে এক কথায় কিছুই বলা সম্ভব নয়। সে বড় কঠিন কাজ। কারণ, ঘটাদা সম্পর্কে প্রত্যেক মানুষের ধারণাই পরস্পর বিরোধী। কেউ ভাবেন ঘটাদা এক জন নির্বোধ মানুষ, কেউ ভাবেন ঘটাদা এক জন বোধ সম্পন্ন জ্ঞানী মানুষ। সুতরাং এ হেন মানুষ সম্পর্কে কোনও মতামত প্রকাশ করতে চাওয়াটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না ভেবে, আমরা ঘটাদা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেই ঘটাদাই ছায়ার মধ্যে থেকে আত্মপ্রকাশ করে বলল, ‘‘আচ্ছা! তাই নাকি?’’ আমরা চুপ। বুঝতে পারছি না ঘটাদার পরের কথা কোন রুট নেবে! তার পর বললেন, ‘‘হ্যাঁ! তাই নাকি! নেলসন ম্যাণ্ডেলার স্ত্রীকে ডিভোর্স করা রাজনৈতিক বিষয় নয়? আচ্ছা তোরা ভেবে দেখেছিস? ২৩ বছর বাদে নেলসন মুক্ত হল জেল থেকে, সারা পৃথিবীর মিডিয়া হামলে পড়ল, নেলসন রাতারাতি হিরো। আমাদের বামফ্রন্ট সরকারও গাদা গাদা গেট বানাল সারা কলকাতা জুড়ে— স্বাগত নেলসন ম্যাণ্ডেলা। নেলসন এলেন— দেখলেন— চলে গেলেন, ভিনি— ভিডি— ভিসি। কিন্তু কৃষ্ণ বর্ণের মানুষগুলোর কী উপকার হল, কী লাভ হল? আমরা যারা ভেবেছিলাম, নেলসনের মুক্তি বর্ণবিদ্বেষী সরকারের মুখে ঝামা। তো কী হল? পর্বতের মূষিক প্রসব! আমি যদি আবার বলি, এই গোটা ব্যাপারটা পুরো প্ল্যান। পুরোটা পূর্ব পরিকল্পিত। ২৩টা বছর খুব একটা কম সময় নয়। যদি বলি, এই ২৩ বছরে কারাগারে থাকার সময়ই আসল নেলসনের মৃত্যু হয় বা তাঁকে হত্যা করা হয়? কোনও এক look alike-কে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল নেলসনের ভূমিকায় থাকার জন্যে? যেটা ওই বর্ণবিদ্বেষী সরকারেরই প্ল্যান্ট করা বা বপণ করা! এ বার সময় বুঝে তাঁকে মুক্তি দিতে সরকারের অসুবিধে কোথায়? এ বার সেই লোকটা মুক্ত হবার পর কী করতে পারেন? মূল আন্দোলনের স্রোতকে শ্লথ বা গতিহীন করতে পারেন। যেটা উনি করেছেন। সে মানুষটা সরকারের মদতে এতটাই Trained বা শিক্ষিত যে, তার ধরা পড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু তবু তাঁর ধরা পড়ার সম্ভাবনা একটা থেকেই যায়।— কার কাছে?’’ চন্দন সম্মোহিত ভাবে বলে উঠল, ‘‘তাঁর স্ত্রীর কাছে।’’ ঘটাদা হঠাৎ দু’হাতে তালি মেরে বললেন, ‘‘ইয়েস! অতএব নেলসন ম্যাণ্ডেলার তাঁর স্ত্রীকে ডিভোর্স করাটা কি ব্যক্তিগত না রাজনৈতিক!’’

কুয়াশা বেড়েই চলেছে। দূরের ল্যাম্পপোস্টগুলো ভেজা চোখে আলো দেখার মতো। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ। অনিন্দ্য হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে উঠল, ‘‘তুমি কী বলতে চাও, ঘটাদা? আমরা যে নেলসন ম্যাণ্ডেলাকে দেখি খবরের কাগজে, সে look alike?’’ ঘটাদা নাটকীয় ভাবে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের কলেজের কেমিষ্ট্রির টিচারের মতো বলে উঠলেন, ‘‘Boy’s! try to understand! What is what.’’ তার পর আমার থেকে একটা সিগারেট চেয়ে সেটা কানে গুঁজে ঘাসের ওপর গ্যাঁট হয়ে বসে বললেন, ‘‘বেশ, তোদের একটা গল্প বলি, কাল— তিন হাজার পাঁচশো খ্রিস্ট পূর্বাব্দ। সময়— দ্বি’প্রহর। স্থান— উত্তর ভারতের বনাকীর্ণ এক পথ। শকটের ঘর্ঘর। আধুনিক ইতিহাস যাকে রথ বলে, তা আসলে ঘোড়ার গাড়ি বই কিছু নয়। বনাকীর্ণ পথে চাকার ঘর্ঘর শব্দে এগিয়ে চলেছে একটি রথ। দুটি ঘোড়ায় টানা। কৃষ্ণ বর্ণ ঘোড়া, দু’জন সওয়ারি, এক জন সারথি। সারথি মধ্যবয়স্ক। সওয়ারিদ্বয় কৈশোর অতিক্রান্ত সদ্য যুবক। সারথি এই দুই সওয়ারির কৌতুকের পাত্র। আধুনিক ভাষায় টিজ্ করার পাত্র। দুই সওয়ারি ক্রমাগত শ্রদ্ধামিশ্রিত কৌতুকের ভাষায় সারথিকে খোঁচা মেরেই চলেছে। অথচ, সম্বোধন করে চলেছে খুল্লতাত বলে অর্থাৎ খুড়ো বলে। দুই সওয়ারি নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করেই চলেছে। দুই সওয়ারির এক জন কালো চেহারার ও এক জন সাদা চেহারার। অর্থাৎ কৃষ্ণ বর্ণ ও শ্বেত বর্ণ। কৃষ্ণ বর্ণের মানুষটা বলে উঠল, ‘‘খুড়ো, এত তাড়াতাড়ি যাব না। আজ অনেক দিন বাদে গ্রামছাড়া হয়েছি।’’ সারথি মুখ ঘুরিয়ে বলে, ‘‘এর মানে কী?’’ পিছনে বসে থাকা শ্বেত বর্ণের সওয়ারিটি বলে, ‘‘ভাই যা বলছে তাই হবে।’’ সারথি গাড়ি শ্লথ করে। এক সময় গাড়ি দাঁড়ায়। তার পরে ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘‘তোমরা কী চাও?’’ কৃষ্ণ বর্ণ মানুষটা সহাস্য বদনে বলে, ‘‘খুড়ো আমার খুব একটা যাবার ইচ্ছে নেই তোমাদের রাজধানীতে। আমার গ্রাম আমার কাছে স্বর্গ। সেখানে অপেক্ষায় বসে আমার বাপ, আমার মা, আমার নর্মচরীরা অর্থাৎ আমার প্রেয়সীরা। তাদের ছেড়ে যখন মুক্ত আকাশের নীচে দাঁড়িয়েছি, তখন আকাশকে একটু চিনি না কেন! আকাশকেই ছাদ ভেবে পৃথিবীর খানিকটা অংশকে ঘর ভাবি।’’ সারথি কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুখে আবার প্রশ্ন করে, ‘‘কিন্তু কী চাও?’’ শ্বেত বর্ণের মানুষটা আবার বলে ওঠে, ‘‘ভাই যা বলবে, তাই হবে।’’ কৃষ্ণ বর্ণের মানুষটা সহাস্য বদনে বলে, ‘‘খুড়ো, আমি এত তাড়াতাড়ি অভীষ্ট লক্ষ্যে যেতে চাই না। আমাকে একটু বেশি সময় প্রকৃতির কোলে থাকতে দাও।’’

অশ্বের মুখ ঘুরিয়ে সারথি আরও নির্জন বনাকীর্ণ পথ ধরল। দু’পাশে আদিম বৃক্ষের সারি, মাথার ওপর জ্বলন্ত সূর্য, ঘন পল্লব ভেদ করে মাঝে মাঝে হানাদার আক্রমণ করছে ঠিকই, তবে সে হানা খুব জোরদার নয়। এরই মধ্যে রথের ভেতর জমে থাকা নানা জিনিসের আড়াল থেকে শ্বেত বর্ণ মানুষটা সন্তর্পণে একটি মৃৎপাত্র বার করল। তার পর পাশের মানুষটার দিকে তাকিয়ে কেমন সলজ্জ হাসি হেসে বলল, ‘‘ভাই একটু পান করি?’’ ভাই মুখ টিপে হেসে বলল, ‘‘আমি নিষেধ করলে যেন কত শুনবে!’’

এমন সময়েই অঘটনটা ঘটল। রথের চাকা বনাকীর্ণ পথের মাঝে একটি গহ্বরে পড়ে ভেঙে গেল। সারথি রথ থেকে নেমে সব কিছু নিরীক্ষণ করে বলে, ‘‘রথচক্রের পরিবর্তন করতে হবে, তার আগে এই গহ্বর থেকে রথ তোলা বড়ই আবশ্যক। কারণ, একটু পরেই সন্ধে হবে। এই অরণ্য শ্বাপদসংকুলও বটে।’’ রথটা এমন একটা জায়গায় স্থির হয়েছে যে, জায়গাটা একটা উঁচুনিচু প্রান্তরের মতো, খুব একটা গাছপালা নেই। তিন জনের প্রচুর চেষ্টায় কিছুই হল না। আর এক জন মানুষ হলেই তা সম্ভব হবে। এ দিকে সূর্য ডুবতে বসেছে — দূরে একটি উপত্যকার প্রান্তে সূর্য এসে দাঁড়িয়েছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই গা-ঢাকা দেবে। কৃষ্ণ বর্ণের মানুষটা এক দৃষ্টিতে উপত্যকার দিকে তাকিয়ে। সবাই তার দৃষ্টিকে অনুসরণ করল। দেখা গেল, দূরে সূর্য ডুবছে আর রক্তিম বর্ণ আকাশকে পিছনে রেখে এক জন মানুষ এগিয়ে আসছে।

এক দণ্ডকাল পরে, সবাই ঘর্মাক্ত কলেবরে মাটিতে বসে— রথের চাকা গহ্বর-মুক্ত। সারথি বলল, ‘‘এ বার আগুন জ্বালাতে হবে। কারণ, রথচক্রের পরিবর্তন এই অন্ধকারে সম্ভব নয়। আজ রাতে এখানেই থাকতে হবে।’’ সারথি আগন্তুককে বলে, ‘‘আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ, আমাদের সাহায্য করার জন্য।’’ আগন্তুক ধীর স্বরে বিনয়ের সঙ্গে বলে, ‘‘এ তো মানুষের ধর্ম।’’ সারথি খুশি হয় তার বিনয় দেখে। তার পর প্রশ্ন করে, ‘‘তুমি কে? কোথা থেকে আসছ? কোথায়ই বা যেতে চাও?’’ আগন্তুক কেমন ইতস্তত করে। তার পরে বলে, ‘‘আমার নাম বিষ্ণু। এইটুকু জানাতে পারি, আমি এক জন ভাগ্যান্বেষী। ভাগ্যের সন্ধানে ঘুরছি, এর বাইরে কিছু প্রশ্ন করবেন না দয়া করে, তা জানানোর সময় আসেনি।’’ সারথি বিরক্ত হয়, ‘‘এ আবার কেমন কথা?’’ কৃষ্ণ বর্ণের মানুষটা সহাস্য বদনে বলে, ‘‘খুড়ো, কেন ওকে বিব্রত করছো, সাহায্যকারী ঈশ্বরেরই আর এক রূপ।’’ তার পর হেসে বলে, ‘‘তুমি কিছু মনে কোরো না বিষ্ণু। আমার নাম বাসু। আমি রাজধানীতে যাচ্ছি, তবে ঘুরতে ঘুরতে। আমার পাশে আমার ভাই বলদেব। যদি কিছু মনে না কর, আজ রাতে আমাদের অতিথি হতে পারো। এই রাতে এই বনাকীর্ণ পথ চলা নিরাপদ হবে না। তুমি আমাদের আতিথ্য গ্রহণ করলে আমরা খুশি হব।’’ এক দণ্ড পরে, দেখা গেল অরণ্যের মধ্যে আগুনের আভা। চার জন আগুনের পাশে বসে। বলদেব ততক্ষণে মৃৎপাত্রের অমৃতসুধা পানে রত হয়েছেন। সারথি রাতের ভোজনের আয়োজনে ব্যস্ত। বাসু এবং বিষ্ণু মুখোমুখি বসে। বাসু প্রশ্ন করে, ‘‘বিষ্ণু তোমার অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে চাইব না, তবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলতে আপত্তি আছে কি?’’ বিষ্ণু অদ্ভুত ভাবে হাসে। তার পর বলে, ‘‘যার অতীতই অন্ধকারের গর্ভে, তার আবার ভবিষ্যৎ কী!’’ বাসু বলে, ‘‘তার মানে কী? তোমার কোনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই নেই?’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘ভাগ্য আমায় যে দিকে নিয়ে চলেছে, আমি সেই দিকেই চলেছি।’’ বাসু বলে, ‘‘সবল শক্তিশালী মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে। আর তোমায় দেখে দুর্বল মনে তো হয় না।’’

বিষ্ণু কিছু বলতে গিয়ে চুপ করে যায়। সারথি ওদের দিকে চুপ করে তাকিয়ে ওদের লক্ষ করে চলে। আগুনের আলোয় বিষ্ণুকে দেখা যাচ্ছে। গায়ের রঙ কৃষ্ণ বর্ণ। সম্ভবত ভারতের দক্ষিণ অংশের বাসিন্দা। ছিপছিপে চেহারা, চিতা বাঘের মতো ক্ষীপ্র। তার শরীরের পেশি দেখে বোঝা যায়— প্রয়োজনে তার ব্যবহার অকল্পনীয় হতে পারে। সবচেয়ে আশ্চর্য তার দুটি চোখ। এত নির্বিকার এবং এত গভীর যে, মানুষ সম্মোহিত হয়ে যেতে পারে। সারথি মন দিয়ে বাসু ও বিষ্ণুর কথোপকথন শুনে যায়। বাসু মহাপণ্ডিত। তার কথা তার মেধা আজ প্রায় কিংবদন্তী। কিন্তু বিষ্ণু? এ মানুষটা কে? এক অজ্ঞাত কুলশীল অথচ কী তার পাণ্ডিত্য! কী মেধা! কী পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা! কী প্রচণ্ড বিশ্লেষণী শক্তি! কোনও অংশেই বাসুর চেয়ে কম নয়! রাত বাড়ে, দু’জন দু’জনের কথায় মুগ্ধ। দু’জন মানুষ যেন আয়নায় নিজেদেরই দেখছে। সারথি ভাবে এ রকম কি হতে পারে? একই রকম দু’জন মানুষ? এত মিল!

পরের দিন সকালে সারথি ঘুম থেকে উঠে দেখে বলদেব পাশে শুয়ে। কিন্তু বাসু আর বিষ্ণু নেই! সারথি চিন্তিত হয়ে খুঁজতে খুঁজতে অরণ্যের ভেতর প্রবেশ করে দেখে একটি উঁচু টিলার উপর দাঁড়িয়ে দু’জন ধনুর্বিদ্যাভ্যাস করছে। সারথি দূর থেকে দেখে, দু’জনের কী আশ্চর্য দক্ষতা! কেউ কম যায় না। ধীরে ধীরে বিষ্ণু সহজ হয়ে আসে। সারথি দেখে বাসু আর বিষ্ণু দু’জনেই দু’জনকে ভীষণ ভাবে পছন্দ করে ফেলেছে। বলদেব খুব খুশি। কারণ, সে জানে ভাইয়ের সঙ্গে তার বুদ্ধি ও শিক্ষার বিস্তর ফারাক। ভাই তার সঙ্গে কথা বলে খুব একটা সুখ পায় না। ভাই তার মনের মতো বন্ধু পেয়েছে, এতেই তার আনন্দ। আনন্দে একটু বেশি মাধ্বী পান করে ফেলে। সারথি বিষ্ণু ও বাসুর কথোপকথন শোনে নানা কাজের ফাঁকে। বাসু বলে, ‘‘আচ্ছা বিষ্ণু, ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তোমার কী মত?’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘আচ্ছা, তুমি কখনও ভেবে দেখেছ, একটি দেশ মানে তো শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড নয়। দেশ মানে তো জনসাধারণও। জনসাধারণের উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি কি সম্ভব?’’ বাসু মুচকি মুচকি হেসে বলে, ‘‘বলে যাও, বলে যাও। বেশ বলছ।’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘অথচ দেখ যারা দেশ শাসন করে চলেছে সেই ক্ষাত্র শক্তি বা ক্ষত্রিয় শক্তি কী আশ্চর্য রকম জনগণের স্বার্থ সম্পর্কে উদাসীন!’’ বাসু বলে, ‘‘তা হলে কী হওয়া উচিত?’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘আমি জানি না। তবে এই সম্ভোগম ও কলহপরায়ণ মাৎস্যন্যায়ধর্মী নির্বোধ ক্ষাত্র শক্তির অধীনতা মুক্ত একটি শাসনতন্ত্রের প্রয়োজন।’’ বাসু মুখ টিপে হাসে। বলে, ‘‘অর্থাৎ অখণ্ড ভারতবর্ষ?’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘ঠিক, এই রাজায় রাজায় কলহে সাধারণ মানুষ নিষ্পেষিত হয়ে চলেছে। আমি নিজে তার শিকার,’’—বলেই বিষ্ণু চুপ করে যায়। বাসু হেসে বলে, ‘‘না বন্ধু, তোমার অতীত জানতে চাইব না।’’ বিষ্ণু হেসে ওঠে। সারথি ভাবে কী আশ্চর্য ভাবে দু’জন মানুষের দর্শনের মিল!

দ্বিপ্রহর ভোজনের সময় বাসু প্রশ্ন করে, ‘‘বিষ্ণু, তুমি কি বিবাহিত?’’ বিষ্ণু লাজুক ভাবে বলে, ‘না’। তার পর বাসুকে প্রশ্ন করে, ‘‘তুমি কি বিবাহিত?’’ বলদেব বলে ওঠে, ‘‘কোন মতে? গান্ধর্ব মতে কি?’’ তার পর সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। বিষ্ণু অপ্রস্তুতের মতো বলে, ‘‘আমি কি কিছু ভুল প্রশ্ন করেছি?’’ বাসু হাসতে হাসতে বলে, ‘‘না বন্ধু, তোমার প্রশ্ন সঠিকই ছিল। কিন্তু আমার উত্তর দেওয়াটা বড় কঠিন।’’ সারথি হাসতে হাসতে বলে, ‘‘আমাদের বাসু প্রতি সন্ধ্যায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।’’ বিষ্ণু চুপ করে যায়। সবাই হাসাহাসি করেই চলে। সারথি লক্ষ্য করে বিষ্ণুর নারী সম্পর্কিত বিষয়ে একটু রক্ষণশীলতা আছে। এই একটি জায়গাতেই বাসুর সঙ্গে তার অমিল।

সন্ধেবেলা ওরা রথ থামায় এমন একটি স্থানে যার খুব কাছেই একটি শবরপল্লি আছে, এবং জানা গেল আজ তাদের উৎসব। বলদেব তো উৎসাহে লাফিয়ে উঠল। কারণ, তার মৃৎপাত্র এখন প্রায় শূন্য। বাসু ছেলেমানুষের মতো বিষ্ণুকে বলল, ‘‘চলো ওদের উৎসবে যাই— শবর রমণীরা কিন্তু সত্যিই রমণীয়।’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘না বন্ধু, আমার ওতে উৎসাহ নেই। তবে তুমি যেতে চাইলে তোমার সঙ্গে যাব, কারণ তোমার সঙ্গই আমার কাছে পরম প্রিয়।’’

উৎসবের আনন্দে মত্ত সবাই। বলদেব প্রায় মত্ত অবস্থায় রমণীদের সঙ্গে নেচে চলেছে। বাসু রমণীদের সঙ্গে রঙ্গ-রসিকতায় ব্যস্ত। সারথি অত্যধিক সুরাপানের ফলে প্রায় অচৈতন্য। বিষ্ণু চুপ করে বসে, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। এক সময় বলদেব এসে তার পাশে বসে হাঁপায়। বিষ্ণু বলে, ‘‘সত্যি বলতে কী আমার কিন্তু ভালই লাগছে।’’ বলদেব হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘‘এ আর কী এমন, আমাদের গ্রামের হল্লীশকের তুলনায় এ উৎসব তো ম্লান।’’ বিষ্ণু প্রশ্ন করে, ‘‘হল্লীশক আবার কী উৎসব?’’ বলদেব আর এক দফা নাচার জন্যে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘‘সে উৎসব বাসুরই আবিষ্কার।’’ বলেই দৌড়ে চলে যায় রমণীদের মাঝে।

পরের দিন সকাল— সারথি ঘুম থেকে উঠে শোনে বাসুর একটু জ্বর এসেছে। সারথি ব্যস্ত হয়ে সবাইকে বলে, ‘‘এ বার আমাদের রাজধানীর দিকে যাওয়া উচিত। রাজধানী এখান থেকে প্রায় দু’দিনের পথ।’’ সবাই সম্মত হল। রথ ঘোরানো হল রাজধানী অভিমুখে। বেলা দ্বিপ্রহরের দিকে বাসুর শুরু হল ভেদ বমি, আগের রাতে শবরপল্লির খাবারে কোনও ভাবে বিষক্রীয়া হয়েছে তার। বিষ্ণু সারথিকে বলল, ‘‘খুড়োমশাই, যত তাড়াতাড়ি পারেন লোকালয়ে চলুন। এই মুহূর্তে বাসুর চিকিৎসা বড় আবশ্যক।’’ ঝড়ের গতিতে রথ ছুটে চলে। কিন্তু কোনও লোকালয়ের সন্ধান পাওয়া গেল না। অথচ সন্ধে এসে পড়ছে, বাসুর শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটছে।

সারাটা রাত বিষ্ণু বাসুর মাথা কোলে নিয়ে শুশ্রূষা করে চলে। বলদেব তো কেঁদেই চলেছে। সকালের দিকে সারথির একটু চোখ লেগে এসেছিল। ঘুম ভাঙতেই দেখে বলদেব ঘুমোচ্ছে। বাসু শুয়ে আছে, তবে বিষ্ণুর কোলে মাথা দিয়ে নয়। বিষ্ণু অদ্ভুত ভাবে বাসুর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারথি এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে, ‘‘কী হয়েছে?’’ বিষ্ণু সারথির দিকে তাকায়। বিষ্ণুর দুটো চোখ লাল হয়ে আছে। কাঁদতে না পারার যন্ত্রণায়। সারথি বুঝতে পারে, বাসু আর ইহলোকে নেই। এর মধ্যে বলদেব উঠে দাঁড়ায়। সব বুঝে আকাশ ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করে।

বেলা বাড়ে। গাছের তলায় বাসুর দেহটা শায়িত। বলদেব কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। বিষ্ণু চুপ করে বাসুর দেহটার দিকে তাকিয়ে বসে। অস্থির ভাবে পায়চারি করছে শুধু সারথি। তার মনের মধ্যে আকাশ-পাতাল হচ্ছে। তার গোটা অভিযানটাই নষ্ট হয়ে গেল। এখন বাসুকে যদি রাজধানীতে না নিয়ে যেতে পারে, তবে সেই মানুষগুলোকে কী বলবে সে, যারা বাসুর অপেক্ষায় দিন গুনছে। সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে একটি ক্ষীণ নদী। সারথি এগিয়ে যায় নদীর দিকে। মোহাবিষ্টের মতো নদীর জলে নেমে যায়। তার পর গলা-জলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এখান থেকে দূরে বাসুর দেহটা আর তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বিষ্ণুকে দেখা যাচ্ছে। বাসুর শরীরের হলুদ আবরণের একটা প্রান্ত হঠাৎই হাওয়ায় বিষ্ণুর মুখের ওপর উড়ে পড়ল। মনে হল, বাসু শায়িত দেহটা থেকে বেরিয়ে এসে দণ্ডায়মান বিষ্ণুর মধ্যে প্রবেশ করছে। সারথির মনে হল, তার ঈশ্বর দর্শন হল। তার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মতো একটা ভাবনার উদয় হল। সে জল থেকে উঠে ধীর পায়ে বিষ্ণুর কাছে এসে দাঁড়াল। তার পর বিষ্ণুর হাত ধরে বলে, ‘‘চলো, কথা আছে।’’ এক দণ্ড পরে নদীর ধারে বিষ্ণু ও সারথি মুখোমুখি। বিষ্ণু বলে, ‘‘অসম্ভব, আপনার প্রস্তাব আমি মানতে পারছি না।’’ সারথি ধীর স্বরে বলে, এটাই নিয়তির ইচ্ছে।’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘এ শঠতা। এ অপরাধ।’’ সারথি বলে, ‘‘তার বিচার ইতিহাস করবে। তুমি আমি নির্ণয় করার কেউ নই। আর এ কথা আমার না। এ বাসুরই দর্শন।’’ বিষ্ণু অস্থির ভাবে মাথা ঝাঁকায়। বলে, ‘‘কিন্তু আপনি আমায় বাসু সাজতে বলছেন?’’ সারথি বলে, ‘‘তুমি তোমার ভূমিকাই পালন করবে, শুধু বাসুর নাম নিয়ে।’’ তার পর একটু সময় নিয়ে বললেন, ‘‘ভেবে দেখ, যেখানে যাচ্ছি আমরা, রাজধানীতে, বিজয়ধনু উৎসবে। সেখানে কেউ বাসুকে আগে দেখেনি। শুধু নাম শুনেছে। তোমাকে তো আগেই আমি বললাম, এই অভিযানে আমার ভূমিকা দ্বি-মুখি গুপ্তচরের মতো। অর্থাৎ রাজা আমাকে পাঠিয়েছেন বাসুকে রাজধানী নিয়ে যাবার জন্য, সেখানে রাজা তাকে হত্যা করবে। আর আমি বাসুকে নিয়ে যাচ্ছি অত্যাচারী রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ করানোর জন্যে। এ ক্ষেত্রে অগণিত মানুষ অপেক্ষা করছে বাসুর জন্যে। বাসু এসে তাদের মুক্তি দেবে। সে ক্ষেত্রে যদি বাসু না পৌঁছয়, এত মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হবে। যার দায়ভার তোমাকেই নিতে হবে, বিষ্ণু। আর বাসু তোমার অপছন্দের লোক তো নয়, তোমাদের দু’জনের যোগ্যতা—দর্শন সবই প্রায় একই রকম। সে ক্ষেত্রে তোমার নিজেরই দর্শনের দার্শনিক হতে আপত্তি কোথায়?’’ বিষ্ণু চুপ করে থাকে। সারথি বলে, ‘‘ভেবে দেখ, তুমি তো ভাগ্যান্বেষী। এত বড় সুযোগ ভাগ্য তোমার হাতে তুলে দিচ্ছে, আর তুমি তা প্রত্যাখ্যান করছ?’’ বিষ্ণু বলে, ‘‘কিন্তু বলদেব?’’ সারথি হেসে বলে, ‘‘বাসুর অবলম্বন ছাড়া বলদেবের অস্তিত্ব কতটুকু? ও বাসুর নামের অবলম্বনটুকুও ছাড়তে চাইবে না।’’

সময় বয়ে যায়। এক সময় দু’জন নদীর পাড় থেকে এগিয়ে যায়, বাসুর শায়িত দেহটার দিকে। বাসুর দেহটা এই জনহীন প্রান্তরে একটি গাছের নীচে সমাধিস্থ করা হল। বলদেব বিষ্ণুর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘‘চল ভাই, রাজধানী আমাদের মানে বাসু আর বলদেবের প্রতীক্ষায় বসে আছে।’’ সারথি অক্রূর সসম্ভ্রমে বিষ্ণুর গায়ে বাসুর হলুদ অঙ্গ আবরণটি জড়িয়ে দিল। বিষ্ণু এগিয়ে যেতে যায়। বলদেব তার হাত ধরে বলে, ‘‘এটা নিতে ভুলে যাচ্ছো—’’। বলদেবের হাতে একটি ময়ূরপুচ্ছ।

তিন জনে রথের দিকে এগিয়ে যায়। তিন জনের এক জন মানুষ গাছের নীচে মাটির তলায় শায়িত মানুষটার হলুদ অঙ্গ আবরণীটি গায়ে জড়িয়ে নিল। সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে নিল শায়িত মানুষটার অসংখ্য কিংবদন্তী। এই মানুষটা জানে না, এই মানুষটার সামনে অনেক কাজ। এই মানুষটাকে রাজধানী পৌঁছে রাজাকে হত্যা করতে হবে। আগামী দিনে অর্জুনের সারথি হতে হবে, ভারতযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে হবে। আরও অসংখ্য কাজ করতে হবে।’’

এইটুকু বলে ঘটাদা থামলেন। আমরা বোকা হয়ে গেছি, মুখ থেকে কথা বার হচ্ছে না। অনিন্দ্যই প্রথমে গলা খাকারি দিয়ে বলল, ‘‘তুমি কী বলতে চাইছ, ঘটাদা? বৃন্দাবনের কৃষ্ণ আর মথুরার কৃষ্ণ আলাদা? এ তথ্য কোথায় পেলে?’’ ঘটাদা আমার দেওয়া সিগারেটটা কানের পাশ থেকে বার করে ধরায়। তার পরে বলে, ‘‘তথ্য লুকিয়ে আছে মহাভারতেই। তথ্য জুগিয়েছেন অনেকেই। ব্যাসদেব থেকে রাজশেখর বোস, মায় তোদের নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়িও!’’ আমি বললাম, ‘‘কী সে তথ্য?’’ ঘটাদা বললেন, ‘‘বেশ, ধরে নিলাম দু’জনে আলাদা নয়, তবে তোদের কৃষ্ণ মথুরায় যাবার পর বৃন্দাবনে আর ফিরে এলেন না কেন? সারা জীবন ফিরে এলেন না। অথচ মথুরা থেকে বৃন্দাবনের পথ মাত্র ঘণ্টা তিনেকের! অথচ বলদেব মানে বলরামকে পাঠিয়েছিলেন বৃন্দাবনে। নিজে যাননি। কেন? বৃন্দাবনের পুরনো বন্ধু সুদামার সঙ্গে মথুরায় দেখাও করেননি। কেন? মহাভারতে এক বারই মাত্র রাধার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়। তখন যুদ্ধবিরতি চলছিল। রাধা ঘুরতে ঘুরতে সখীদের নিয়ে কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে এসে পড়লেন। যুদ্ধক্লান্ত কৃষ্ণকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন। কোনও কথা বললেন না। তার পর ফিরে গেলেন। তার পর সখীদের বললেন, ‘এ মানুষটার সঙ্গে আমার দেখা না হলেই ভাল হত। আমি যে মানুষটাকে চিনতাম, এ মানুষটা সে মানুষ নয়। যে কালিন্দীর তীরে বসে বাঁশী বাজাত, আমি তাকে চিনতাম। এই যুদ্ধক্লান্ত নিষ্ঠুর ক্রূর মানুষটা আমার কৃষ্ণ নয়’। আমরা ভাবলাম, শ্রীরাধা এ কথা অভিমানে বলেছেন। প্রেমিক কৃষ্ণকে যুদ্ধ-বেশে দেখে শ্রীরাধার ভাল লাগেনি, তাই অমন বলেছিলেন। আমি যদি বলি, শ্রীরাধা আক্ষরিক অর্থেই বলেছিলেন, ‘এই লোকটা আমার কৃষ্ণ নয়’।’’

এই বলে ঘটাদা হঠাৎই ধড়মড় করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘এ বাবা! দোকান বন্ধ হয়ে যাবে, বাচ্চার বেবিফুডটা কেনা হয়নি। চলি রে,’’ বলে কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে গেলেন। আমরা চার জন বাকরুদ্ধ হয়ে কুয়াশার মধ্যেই বসে রইলাম। বাইরে কুয়াশা, ভেতরে এক নতুন কুয়াশা, যার জাল বুনে দিয়ে গেলেন ঘটাদা।

 

সৌজন্যে: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮ মাঘ ১৪১৩ রবিবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭

 

 

Related articles

Apple Electronics Climb the List of the Top Gadgets in Forbes Magazine

I understand how that could positively effect your body,...

Customer Engagement Marketing: A New Strategy for the Economy

I understand how that could positively effect your body,...

Television is in Steep Decline Compared to Social Network Marketing

I understand how that could positively effect your body,...

Social Networks Advertising is Important the Future Of Marketing

I understand how that could positively effect your body,...

Mobile Marketing is the Future of E-Commerce, Real-World Study Finds

I understand how that could positively effect your body,...

Case Studies

Content & copywriting

Compass Music Platform

A clothing brand wanted to launch a new e-commerce website that would allow customers to browse and purchase their products online. We developed a...
Content & copywriting

NewsWeek Magazine

A clothing brand wanted to launch a new e-commerce website that would allow customers to browse and purchase their products online. We developed a...
E-commerce development

Beauty & Makeup Shop

A clothing brand wanted to launch a new e-commerce website that would allow customers to browse and purchase their products online. We developed a...