রঞ্জু আর লিলি দুই ভাই বোন থাকে নানা বাড়িতে, বিশাল বনেদি বাড়ি তাদের নানার। অনেক ধুম ধাম করে বিয়ে হয় তাদের মায়ের। বিয়ের কয়েক বছর পরে ৪ বছরের লিলি আর কোলের শিশু রঞ্জুকে নিয়ে ফিরে আসে সে বাবার বাড়িতে। তখন থকেই রঞ্জুরা আছে নানা বাড়িতে। লিলির বয়স বাড়লে একসময় বিয়ে হয়ে যায়।
তখন থেকে রঞ্জু আর তার ছোট মামা নবু থাকে একই ঘরে। পাশের ঘরে থাকে বড় মামা বাদশা ও তার স্ত্রী লাল মামী। বড় মামা আর মামীর মাঝে সম্পর্কটা একটু কেমন ছাড়া ছাড়া, বিয়ে হয়েছে অনেক দিন কিন্তু কোন ছেলেপুলে হয়নি।
চিররুগ্ন নবু মামা শরীর ভালো করার জন্য বাইরের শহরে স্কুলে গেল পড়তে। বেরাতে এসে নবু মামা রঞ্জুকে জানালো একবার তার লিলির সাথে দেখা হয়েছিলো। লিলিদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। রঞ্জুর সাথে লিলির আর যোগাযোগ হয় না। এদিকে লিলির তার স্বামীর সাথে সম্পর্কটা আরও বেশী এলোমেলো হতে থাকে।
নবু মামা লাল মামীর প্রতি অদ্ভুত এক আকর্ষণ অনুভব করে। শহর থেকে যখনই গ্রামে বেড়াতে আসে তখন এমন কিছু করে যাতে লাল মামী খুশী হয়। মেট্রিক পরীক্ষার পরে নবু মামা বাড়িতে গ্রামোফোন এনে চমকে দেয়ে লাল মামীকে, সারা রাত গান শোনা চলে।
নবুকে বিয়ে দেয়ার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে সবাই, পছন্দও হয়ে যায়। অন্য দিকে লাল মামী রাগারাগি করে চলে যায় তার বাপের বাড়িতে।
রঞ্জুর বড় নানী মারা যাওয়ার আগে তার বিশাল সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান লিলি আর রঞ্জুকে।
নবু প্রেসিডেন্সি কলেজে চলে যায় পড়ার কথা বলে কিন্তু বড় মামা যখন লাল মামীকে ফিরিয়ে আনতে যায় তখন জানতে পারে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে বলে লাল বৌ আরও অনেক দিন আগেই নবুর সাথে চলে গেছে। এরপর থেকে বাদশার মাথা কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়।
রঞ্জুর নানাজান সব সম্পত্তি বাদশার নামে লিখে দিয়ে হজে চলে যায়। তার হজে যাওয়ার পরে তাদের অনেকগুলি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায়, অনেক সম্পত্তি পানির দামে বিক্রয় করে দেয় বাদশা মসজিদ তৈরি করার জন্য।
অনেক বছর পরে রঞ্জু তার বোনের কাছ থেকে চিঠি পায় চলে যাওয়ার জন্য, কিন্তু রঞ্জুর যাওয়া হয় না।
একদিন লাল মামী তার কোলে একটা শিশুকে নিয়ে এসে দাঁড়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে। আধ পাগল বাদশা ছাড়া আর কেউ তাতে খুশী হতে পারে না। রঞ্জু বুঝতে পারে এবার তার এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।
এভাবেই শেষ হয় অচিনপুরের গল্প।